ইতালি ফেরত কিছু সংখ্যক প্রবাসীদের নিয়ে স্যোসাল মিডিয়া ভাইরাল। তাদের আচরন, ব্যবহার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে ফেসবুক-টুইটার জগতে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। কেউ প্রবাসীদের পক্ষ নিচ্ছেন আবার কেউবা পক্ষ নিচ্ছেন মন্ত্রী মহোদয়ের।
কেউবা দোষছেন প্রবাসীদের আবার কেউবা দোষছেন সরকারকে তাদের দেশে আসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
আমরা বাংলাদেশী আর সে কারনেই আমাদের মধ্যে একটা স্বভাব সবসময় কাজ করে আর সেটা হচ্ছে দোষারোপ। আমরা নিজেদের ভুল/অন্যায়কে কখনোই দেখি না, আমাদের ভুল/অন্যায় কোন কাজের জন্য অন্য আরেকজন অথবা দশজন যে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সেটা আমাদের নজরে কখনই পড়ে না। আমরা বাঙালীরা মনে করি আমি যা করছি তা অবশ্যই ঠিক। এই মন-মানসিকতা আমাদের প্রাকৃতিগত মজ্জায় পরিনত হয়েছে।
ইতালী ফেরত ১২৮ জনকে রাখা হয়েছে হাজী ক্যাম্পের কোয়ারাইন্টনে। বলা যায় সরকার জোর করেই তাদেরকে কোয়ারাইন্টনে রেখেছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো আপনারা যারা ইতালী ফেরত তাদেরকে কেন জোর করে সরকার কোয়ারাইন্টনে রাখবে? বরং তাদের স্ব-ইচ্ছায় কি কোয়ারাইন্টাইনে যাওয়া উচিৎ ছিল না? মানলাম আপনাদেরকে ইতালী এয়ারপোর্টে ভালো করে পরীক্ষা করে সার্টিফিকেট দিয়েই বিমানে করে দেশে আসার অনুমতি দিয়েছে কিন্তু সরকার যেহেতু চাচ্ছে কিছুদিন আপনারা কোয়ারাইন্টানে থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ হয়ে আপনার স্বজনের সাথে সাক্ষাৎ করেন, সেহেতু কি তা মেনে নেওয়া উচিত ছিল না?
বরং না তারা কি করলেন? তারা সাথে সাথে এয়ারপোর্টে প্রতিবাদ শুরু করলেন, বিক্ষুব্দ হয়ে উঠলেন। আসলেই কি এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ যুক্তিযুক্ত ছিল? একবার ভেবে দেখুন। আপনাদের এমন অসহযোগিতামুলক আচরনের ফল কি দাড়াল, প্রশাসন বাধ্য হলো আপনাদের সাথে জোর-জবরদস্তি করতে, আপনাদের আচরনের কারনে কয়েক কোটি প্রবাসীকে অপমানমুলক কটুক্তি শুনতে হলো। এই #নবাবজাদা গালি শুনার প্রেক্ষাপটটা কি তৈরি করতে আপনারাই ভূমিকা রাখলেন না?
অনেকে অভিযোগ করছেন বিদেশ ফেরত যাদেরকে যেখানে কোয়ারাইন্টাইনে রাখা হয়েছে সেই জায়গাটা সম্পূর্ণ অসাস্থকর। টয়লেট, বেসিন নোংরা। থাকার পরিবেশ নেই। মানলাম এটাও সরকারের দূর্বলতার একটি প্রকাশ। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো আপনারা উত্তেজিত না হয়ে ধৈর্য ধরে প্রশাসনের সাথে কি সুন্দর করে যোগাযোগ করে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এর একটি সুন্দর সমাধান করতে পারতেন না? এতে কি আপনাদের ইজ্জত কমে যেত, অবশ্যই না। তখন হয়ত আপনাদেরকে দেখে দেশের অনেকেই উৎসাহিত হতো, শিখতো আর উন্নত বিশ্বের সাথে আমাদের এই দেশকে মিলিয়ে নেওয়ার চেষ্ঠা করত।
আপনাদের সাথে প্রশাসন যা করছে তা অবশ্যই কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। কিন্তু সরকার এক প্রকার বাধ্য হয়েই এমনটি করছে। আর এমনটি করার উদ্দ্যেশ্যই বা কি ? কিংবা এমন আচরনে সরকারের স্বার্থ কি? সরকার বা প্রশাসন যা করছে তা শুধুমাত্র দেশের মানুষের স্বার্থেই। আমরা সকলেই জানি আমাদের এই দেশ যেমন জনবহুল ঠিক তেমনি এর অধীবাসীরাও অসচেতন। সামান্য অসচেতনতার দরুন এখানে ঘটে যেতে পারে মারাত্নক দুর্ঘটনা। করোনা ভাইরাস নিয়ে যেখানে উন্নত বিশ্বই দুমড়ে-মুছড়ে গেছে, সেখানে আমরা কতখানি এর মোকাবেলা করতে সক্ষম হবো একবার চিন্তা করে দেখুন ত??
চীনের উহানে যখন বাংলাদেশীরা আটকা পড়েছিল, দেশে আসার জন্য আহাজারী শুরু করে দিয়েছিল, তখন কি এই দেশের সরকার ১৮ কোটি মানুষের রিস্ক নিয়ে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনেনি?
গতকাল বাহরাইন ফেরত যে ব্যক্তিটি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেলেন করোনা ভাইরাস নিয়ে, তিনি কেন এমনটি করলেন? ভাবুন ত, তিনি যেদিকে যাবেন, সেদিকেই কি এই মহামারীটি নিয়ে যাবেন না? তার মাধ্যমে কি সমগ্র দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়বে না এই মহামারীটি?
আজকে যে ৩ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের আক্রান্তের কারন ইতালী ফেরত প্রবাসী। ঐ প্রবাসী কি জানতেন তিনি করোনা ভাইরাস বহন করে নিয়ে এসেছেন? সূদূর ইতালী থেকে তা বহন করে নিয়ে এসে তা চুপিসারে দিয়ে দিয়েছেন তার স্ত্রী-সন্তানদের মাঝে।
এর জন্য দায়ী কে?
আপনাদের সামান্য আবেগের কারনে কি ক্ষতিগ্রস্থ হবে না এই দেশটি? আপনি কি হারাবেন না আপনার আপনজন, স্বজন? তার চেয়ে কি একটু কষ্ট করে সরকারকে, প্রশাসনকে সহযোগীতার মাধ্যমে এই ভাইরাস ঠেকানোর কাজ করা যায় না?
No comments:
Post a Comment