Sunday, February 5, 2017

ছাত্রশিবির

ছাত্রশিবির : সবুজ চত্বরে লালগালিচার এক দুর্জয় কাফেলা
মোঃ ইয়াউমিন কাওছার চৌধুরী

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, যে নামটিতে রয়েছে এক উন্মাদনা, প্রেরণা, স্বপ্ন এবং ভালোবাসা। এই নাম শুধু নাম নয়, এটি একটি ঘর, বিশাল এক সংসার ।প্রবাহমান এক নদীর নাম, যে নদী ভাসিয়ে নিয়ে যায় সাগর সমান হতাশা , মনের গহীনে ঝমাট বাঁধা আবর্জনা, ময়লা আর ক্লেশ।


প্রিয় এই কাফেলার সাথে পরিচয় ২০০৩ সালে চাচাত এক ভাইয়ের মাধ্যমে। তখন আমি ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। ছটপটে এক কিশোর। শিবির শব্দটি তখন আমার কাছে ছিল এক আতঙ্কের নাম, এই নামের প্রতি ছিল ব্যাপক এলার্জি। আব্বা কিংবা আম্মা কেউই শিবিরকে পছন্দ করতেন না, তাই ঐ বড় ভাইয়ের সাথে মেশাকেও পছন্দ করতেন না কখনো। 

তবুও ঐ বড় ভাই থেমে থাকেন নি।প্রতিমাসে কিশোর কন্ঠ ফ্রি দিতেন পড়ার জন্য। বিকালে আসরের নামাজে ডেকে নিয়ে যেতেন।মাগরিব কিংবা আসরের নামাজে মসজিদে না পেলে ঘরে গিয়ে খোজ নিতেন। উঠোন থেকে নাম ধরে ডাক দিতেন আর এই ডাক শুনে তড়িঘড়ি করে অজু ছাড়াই জায়নামাজে দাড়িয়ে যেতাম ( ভয়ে নয় বরং উনার কাছে লজ্জা পাব বলেই এরকম করতাম)। উনি ঘরে ডুকে দেখতেন আমি নামাজ পড়ছি।  মাঝে মধ্যে ফজরের নামাজের জন্য উনি ঘরে এসে ডাকা ডাকি করতেন। কখনো কখনো সন্ধ্যার পর বাড়িতে এসে পড়া লেখার খোজ খবর নিতেন, পরামর্শ দিতেন।

 তার এই কেয়ার টেকিং চোখ এড়ায়নি মায়ের। আম্মার কাছে তিনি এভাবেই প্রিয় হয়ে উঠেন এবং সংগঠন করার প্রাথমিক বাধা দুর করে সংগঠন করার পরিবেশ তৈরি করেন। যখন দুষ্টুমি করতাম কিংবা পড়ালেখায় ফাকি দিতাম তখন তিনি চাচাত ভাইয়ের কাছে নালিশ দিতেন কিংবা নালিশ দিবেন বলে শাসাতেন।

ধীরে ধীরে তিনি সংগঠনের বিভিন্ন প্রোগ্রাম যেমন মিষ্টি চক্র, ফল চক্র, সিঙ্গাড়া চক্র, পিয়াজু চক্র,  কুইজ প্রতিযোগিতা, সাধারণ জ্ঞান প্রোগ্রামগুলোতে দাওয়াত দিতেন। কখনো কখনো এই প্রোগ্রামগুলোতে যেতাম আবার কখনো ফাকি দিয়ে লুকিয়ে পড়তাম, তখন ঐ ভাই বার বার এসে খোজ করতেন। পেরেশান হতেন। পরবর্তীতে দেখা হলে বিভিন্ন অজুহাত (মিথ্যা) দেখাতাম।

২০০৪সালে যখন আমি ৯ম শ্রেণীর ছাত্র ,তখন এরকম একটি সাধারণ সভায় শিবিরের সমর্থক ফরম ফিলাপ করে সমর্থক হই।  ঐ বছরই কর্মী হই। এর পর থেকেই প্রিয় এই কাফেলার সাথে পথ চলা, আত্নার সম্পর্ক। 

পরবর্তীতে ২০০৬ সালের ১৭ই আগস্ট তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ রোকন রেজা ভাইয়ের কাছে সাথী শপথ গ্রহণ করি। ২০১২ সালের ১০ ই নভেম্বর সংগঠনের সর্বোচ্চ শপথ সদস্য শপথ গ্রহণ শহীদি কাফেলার তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি জীবন্ত শহীদ মুহতারাম দেলওয়ার হোসেন সাঈদী ভাইয়ের কাছে। 

আলহামদুলিল্লাহ্‌!  পরিবারের কাছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির আজ এক অনন্য ভালোবাসার নাম। শিবিরের  দুর্দিনে পরম প্রিয় বাবা-মা থাকেন আজ উদ্বিগ্ন, রাতের আধারে অশ্রু বিসর্জন দেন প্রিয় এই কাফেলার বিপদ-মুসিবতে।আলহামদুলিল্লাহ্‌!  ৫ ভাই- বোনের( সদস্য-১,সাথী -২) সবাইকে মহান আল্লাহ এই আন্দোলনে শরীক করেছেন। 

আগামিকাল ৬ই ফেব্রুয়ারি, প্রিয় এই কাফেলার ৪০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। ১৯৭৭ সালের এই দিনে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রঙ্গন থেকে যার পথ চলার সূচনা হয় শহীদ মীর কাসেম আলী (রঃ) এর নেতৃত্বে।

পথ চলার শুরু হতেই ছাত্রশিবিরের এই মেধাবী কাফেলাকে সম্মুখীন হতে হয়েছে নানা অপপ্রচার, বাধা-বিপত্তি আর কুচক্রী গোষ্ঠীর নানা কুচক্রের। যে চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে আজ অবদি পর্যন্ত। দীর্ঘ এই পথ চলায় বাতিল আর হিংস্রবাদী রাজনীতির প্রতিহিংসার শিকার হয়ে ২৩৪ জন মেধাবী ছাত্র শাহাদাতের অমিয় সূধা পান করে চলে গেছেন মহান প্রতিপালকের সান্নিধ্যে। 

অসংখ্য ভাই আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরন করেছেন, কেউবা চোখ হারিয়ে চিরদিনের জন্য অন্ধত্বকে বরন করে নিয়েছেন ,সবুজ এই ভূখন্ডে কালেমার পতাকা উড়ার স্বপ্নে আপন করে নিয়েছেন সকল ব্যাথা বেদনা।কারাগারে মানবেতর জীবন-ঝাপন করছেন আগামি দিনের বাংলাদেশ গড়ার কারিগরগণ। তবুও থেমে থাকেনি এই কাফেলা, সম্মুখে ছুটে চলেছে দূর্বার গতিতে।

আত্নার প্রিয় এই সংগঠন সামনে এগিয়ে যাক আরো দুর্বার গতিতে। আলোর মশাল নিয়ে আলোর পথ দেখাক পথহারা যুব সমাজকে। বাতিলের সকল ষড়যন্ত্র, প্রতিহিংসার দেয়াল চূর্ণ করে গড়ে তুলুক আগামীর সমৃদ্ধ এক সমাজ, যে সমাজ হবে স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী, ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার কান্ডারি।

 ১৬ কোটি মানুষের আশা - ভরসার কেন্দ্রস্থল বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির  টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রুপসা থেকে পাথারিয়া পর্যন্ত অচিরেই প্রতিষ্ঠিত  করবে  দুর্নীতি ও ঘুষমুক্ত এক সমাজ।ইনশাআল্লাহ। 

#Shibir40Yrs #Feb06 #Shibir #Bangladesh

1 comment: