Tuesday, February 14, 2017

ভালোবাসা দিবস

ভালোবাসা দিবস উদযাপন : বিকৃত মস্তিস্কের এক উৎসবের নাম 

মোঃ ইয়াউমিন কাওছার চৌধুরী 


ভালোবাসা শব্দটি খুব সহজেই সকলের সহজাত প্রবৃত্তির সাথে মিশে যায়,কেননা জন্মের পর থেকেই মানুষের বেড়েউঠা এই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করেই,আর তাই ভালোবাসার দিনটিকে নিয়ে সকলের ভাবনাটাও থাকে বিশেষ।অপেক্ষা এবং আগ্রহ নিয়ে এই দিনটির অপেক্ষা করে ষোড়শী, তন্ময়রা। 


এই দিনটির শুরুর গল্পটাই বা কেমন? মিলিয়ন, বিলিয়ন তরুন-তরুনীর ক্রাশ এই দিনটার আগমনই বা হলো কেন? আসুন খুঁজে দেখি ইতিহাসের পাতায় বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আবির্ভাব বা আগমনের পেছনের অজানা কিছু কথা ...


#ভ্যালেন্টাইন ডে এর উৎপত্তি:

২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে "সেন্ট ভ্যালেইটাইন'স নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচার এবং যুদ্ধে আহত সৈনিকদের সেবা শুশ্রুষা করার অভিযোগে তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাঁকে বন্দী করেন।কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। (যদিও এ দিবসটি নিয়ে আরো বেশ কয়েকটি প্রচলিত ধারনার প্রচলন রয়েছে)।


বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টহীন এক  মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেইটাইনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় এবং মানুষ খৃষ্টান ধর্মের প্রতি অনুরক্ত হতে থাকে। এতে রাজা তার প্রতি আরো ক্রোধান্বিত হয়ে  তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। 

সেই দিনটি ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি।এই ঘঠনার প্রায় দুইশতাধিক বছর পর  ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউ ও ১ম জুলিয়াস নিহত ধর্মজাজক সেন্ট ভ্যালেইটাইন'স স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন' দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। 


খৃষ্টানজগতে পাদ্রী-সাধু সন্তানদের স্মরণ ও কর্মের জন্য এ ধরনের অনেক দিবস রয়েছে।

যেমন: ২৩ এপ্রিল - সেন্ট জজ ডে, ১১ নভেম্বর - সেন্ট মার্টিন ডে, ২৪ আগস্ট - সেন্ট বার্থোলোমিজম ডে, ১ নভেম্বর - আল সেইন্টম ডে, ৩০ নভেম্বর - সেন্ট এন্ড্রু ডে, ১৭ মার্চ - সেন্ট প্যাট্রিক ডে।


পাশ্চাত্যের ক্ষেত্রে জন্মদিনের উৎসব, ধর্মোৎসব সবক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য। তাই গির্জা অভ্যন্তরেও মদ্যপানে তারা কসুর করে না। খৃস্টীয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ করা হয়। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়। যদিও এখন বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবেই পাশ্চাত্যে এই দিবসটি উদযাপন করা হয়।


#বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইন্স ডে : 

১৯৯১ সালের দিকে আমাদের দেশে ভালোবাসা দিবসের আবির্ভাব ঘটে "যায়যায় দিন " পত্রিকার  তৎকালীন সম্পাদক সাংবাদিক ব্যক্তিত্ব  শফিক রেহমান এর মাধ্যমে। শফিক রেহমান  পড়াশোনা করেছেন লন্ডনে ।পাশ্চাত্যের রীতিনীতিতে তিনি ছিলেন অভ্যস্ত। দেশে ফিরে তিনিই ভালোবাসা দিবসের শুরুটি করেন।


ঐ বছর “যায় যায় দিন” পত্রিকা ভ্যালেন্টাইনস্ ডে নিয়ে ফেব্রুয়ারী মাসে একটা বিশেষ সংখ্যা বের করে। এরশাদ পতন আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য “যায় যায় দিন” পত্রিকা তখন বাংলাদেশে সবচাইতে জনপ্রিয় পত্রিকা।তরুণ সমাজ ছিল এই পত্রিকার  একনিষ্ঠ পাঠক 


"যায় যায় দিন"র এই বিশেষ সংখ্যা তরুণ সমাজে ব্যাপক সাড়া জাগায়।১৪ই ফেব্রুয়ারি একুশে বই মেলায় গিয়ে দেখা গেল "যায় যায় দিন" এর স্টল পুরোটাই লাল গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো আর স্টল এর মাঝখানে গোলাপ ফুল দিয়ে তৈরী করা একটা বিশাল হার্ট।


"যায় যায় দিন"এর স্টলের সামনে দিয়ে হেটে যাবার সময় শফিক রেহমান এবং পত্রিকার কর্মীরা মেলায় আগত সবাইকে একটি করে লাল গোলাপ ধরিয়ে দেন এবং  বলতে থাকেন "যায় যায় দিনের পক্ষ থেকে ভালবাসা দিবসের শুভেচ্ছা নিন" ।

এভাবেই ঢাকা উনিভ এলাকায় ভ্যালেন্টাইনস্ ডে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং পরের বছর ১৯৯২ সালে TSC তে আয়োজন করা হয় প্রথম প্রেমিক প্রেমিকা সন্মেলন। 


অথচ  ভ্যালেন্টাইনস্ ডে পালন শুরু করার আগে পহেলা ফাল্গুন ছিল উৎসব পালনের সবচাইতে রঙিন আর জাকজমকপূর্ণ দিন।আর পহেলা ফাল্গুনের কেন্দ্রবিন্দু এখনকার মত ঢাকা উনিভ ক্যাম্পাসকে কেন্দ্র করেই ছিল। আজ বাঙালি ভুলে গেছে তার ঐতিহ্য এবং বিজাতীয় এক সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে নিজেদেরকে ঠেলে দিচ্ছে এক গহীন  অন্ধকারময় রজনীর দিকে, যার শেষ প্রান্তে তার জন্য অপেক্ষা করেছে এক হতাশাময় এবং গ্লানিযুক্ত এক প্রহর। 


প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশের অগুনতি তরুণ-তরুণী ভ্যালেন্টাইনস ডে পালনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এক শ্রেণীর তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী এমনকি বুড়া-বুড়িরা পর্যন্ত নাচতে শুরু করে এই দিবসটি নিয়ে। তারা পাঁচতারা হোটেলে, পার্কে, উদ্যানে, লেকপাড়ে, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আসে ভালোবাসা বিলাতে, অথচ তাদের নিজেদের ঘর-সংসারে ভালোবাসা নেই! 


আমাদের বাংলাদেশী ভ্যালেন্টাইনরা যাদের অনুকরণে এ দিবস পালন করে, তাদের ভালোবাসা জীবনজ্বালা আর জীবন জটিলতার নাম। মা-বাবা, ভাই-বোন হারাবার নাম। নৈতিকতার বন্ধন মুক্ত হওয়ার নাম। তাদের ভালোবাসার পরিণতি ‘ধর ছাড়’ আর ‘ছাড় ধর’ নতুন নতুন সঙ্গী। তাদের এ ধরা-ছাড়ার বেলেল্লাপনা চলতে থাকে জীবনব্যাপী। 


বছর ঘুরে ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটি আমাদের ভালোবাসায় রাঙিয়ে গেলেও, ভালোবাসা কিন্তু প্রতিদিনের। জীবনের গতি নির্ধারণ করে ভালোবাসা। মানুষ বেঁচে থাকে ভালোবাসায়। 


বছরে মাত্র একটি দিন ও রাত প্রেম সরোবরে ডুব দেয়া, সাঁতার কাটা, চরিত্রের নৈতিক ভূষণ খুলে প্রেম সরোবরের সলিলে হারিয়ে যাওয়ার কি কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে? ভালোবাসা দিবস পালন করার আগে জানুন এর ইতিহাস , এর উদ্দেশ্য। 


ইসলামী নৈতিকতা ও ইসলামী আদর্শের প্রতি উদাসীন থেকে একদিনের ভালোবাসা দিবস পালন করে কি পারবেন  সমাজে অশান্তি, অরাজকতা ও বিচ্ছৃংখলার মুলোৎপাটন করতে?


না কি  ঐ ভালোবাসা দিবস উদযাপন করতে গিয়ে  ভেঙ্গে ফেলছেন না হাজারো বছরের বঙালির চিরায়ত  সামাজিক বন্ধন, পারস্পারিক সহানুভূতি, সৌহার্দ্যতা ও পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ? ????? 


#valentine_day

3 comments: