Thursday, May 28, 2020

হলিউড মুভি "জ্যাক স্প্যারো" র নায়ক মুসলমান হওয়ার গল্প

উসমানী সাম্রাজ্যের সাহসী নাবিক,
একজন  মাজলুম বীর
জ্যাক স্প্যারো!

ইসলামি ইতিহাস সবচেয়ে বেশি বিকৃতির শিকার। বিশেষ করে ইসলামের গৌরবময় ব্যক্তিবর্গ। আর তা ইসলামের জানের দুশমন পশ্চিমাদের দ্বারা! সেরকমই একজন হলেন 'জ্যাক স্প্যারো'। পশ্চিমা ফিল্ম নির্মাতারা  'জন ডেপ' নামক অভিনেতাকে  'পিরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান' ফিল্মে উপস্থাপন করেছেন। এই জ্যাক স্প্যারো আসলে মধ্যযুগের একজন নামজাদা মুসলিম বীর। জন্মগ্রহণ করেন ১৫৫৩ সালে ব্রিটেনে। মারা যান ১৬২২ সালে তিউনিসিয়ায়।

ইনসাইড হলিউডের দেয়া তথ্যমতে, জ্যাক স্প্যারোর প্রকৃত নাম জ্যাক ওয়ার্ড। তাকে জ্যাক বার্ডি নামেও চেনা যেত। তিনি গ্রেট ব্রিটেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কেন্ট রাজ্যে এক দরিদ্র পরিবার জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলায় বিল-হাওড়ে মাছ শিকার করেন। ১৫৮৮ সালে ভূমধ্যসাগরে ব্রিটিশ নৌবহর ও স্পেনিশ নৌবহরের মধ্যকার আর্মাদার যুদ্ধে রাণী প্রথম এলিজাবেথের নির্দেশে ব্রিটিশদের পক্ষে দস্যুবৃত্তি করেন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তিনি ভূমধ্যসাগরে জলদস্যুতা শুরু করেন। এক ত্রাস হয়ে ওঠেন। ইতিমধ্যে ব্রিটেনের রাজা হন প্রথম জেমস। তিনি স্পেনের সাথে বন্ধুপ্রীতি শুরু করেন। তাকে দস্যুবৃত্তি ছাড়ার আদেশ করেন। তিনি ও অন্যান্য জলদস্যুরা তা মানতে পারেননি। পরোয়ানা জারি হয় তার নামে। তিনি বিপদ আঁচ করতে পারেন।

এজন্য ষষ্টদশ শতাব্দীর শেষদিকে পলায়ন করে তিউনিসিয়া চলে যান। কেননা তিউনিসিয়া ছিল তখন উসমানি খিলাফতের অধীন। এরপর মরক্কোর 'সালা' অঞ্চলের 'আবু রাকরাক' এলাকায় ঘাটি গেড়ে দস্যুবৃত্তি চালিয়ে যান। কিন্তু মুসলিম ভূখণ্ডে থাকতে থাকতে একসময় আল্লাহ তার দিলে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দেন। তিনি ও তার জাহাজের পুরো দস্যু স্টাফ ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। এবং তারা উসমানী সাম্রাজ্যের শক্তিশালী নাবিক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন।  তার ইসলামি নাম ছিল 'ইউসুফ রেইস'। খুব বেশি পাখিপ্রীতির কারণে তাকে 'স্প্যারো'' নামক পাখির নাম দিয়ে দেয়া হয়। পরে এটাই কারণ হয়ে যায় জ্যাক স্প্যারো নামের। কেননা, ইংরেজিতে স্প্যারো অর্থ চড়ুইপাখি।

তিনি খুব বেশি মদ্যপ ছিলেন। বলতে গেলে এ- ক্ষেত্রে ছিলেন প্রবাদপ্রতিম। কিন্তু মুসলমান হওয়ার পর মদপান ছেড়ে দেন। মধ্যযুগীয় গির্জার জুলুম থেকে বাঁচতে ইয়াসমিন সাকলিয়্যাহ নাম্নী এক যুবতী ইসলাম গ্রহণ করেন। সেই পলাতকা যুবতীকে তিনি বিয়ে করেন।

ষোড়শ  শতাব্দীর শেষদিকে আন্দালুসের মরিস্কো মুসলমানরা স্পেনের খ্রিস্টানদের হাতে অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হন। ইসলাম ছেড়ে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করার জন্য তাদের ওপর কিয়ামত বইতে দেয়া হয়। হাজার হাজার মরিস্কো মুসলমান স্পেন থেকে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর দিকে পলায়ন করে। এদের বিপদে এগিয়ে আসেন জ্যাক স্প্যারো। মজলুম মুসলমানদের বাঁচানোর দায়িত্ব নিজ কাঁধে উঠিয়ে নেন। বর্ণিত আছে যে, আন্দালুসের নির্যাতিত মুসলমানদের বাঁচাতে তিনি মরক্কোর জলদস্যুদের সাথে আঁতাত গড়ে তুলেন।

আন্দালুসি মুসলমানদের হত্যাকারী বুনো খ্রিস্টানদের সাথে তিনি ও তার জাহাজের মাল্লারা গেরিলাযুদ্ধে লিপ্ত হন। তাদের হাতে খ্রিস্টানরা নাকানিচুবানি খেতে থাকে। একসময় অবস্থা এই পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াল যে, খ্রিস্টানরা তার নাম শুনামাত্রই আঁতকে উঠত!

তিনি ছিলেন খুবই বুদ্ধিমান। তার সামুদ্রিক জ্ঞান, বুদ্ধি ও রহস্য দেখে মাল্লারা যারপরনাই আশ্চর্য হয়ে যেত। বাস্তবিকপক্ষে তিনি একজন সামুদ্রিক ক্যাপ্টেন ছিলেন। মধ্যযুগে পুরো বিশ্বের মধ্যে ছিলেন একজন সাগরসম্রাট।

মধ্যযুগের নামকরা এই মুসলিম বীরের নামে বেরিয়েছে অনেক নামিদামি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম। কিন্তু ফিল্ম নির্মাতা পশ্চিমা নরাধমরা তার প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করেনি! যিনি সারাজীবন ইসলাম ও মুসলমানদের ত্রাতা ছিলেন। আল্লাহর দীনের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ রহম করুন তার দীনের এই একনিষ্ঠ খাদেম ইউসুফ রেইস ওরফে জ্যাক স্প্যারোর ওপর।
-------
সূত্রাবলি:
১-101 لغز برباروسا- ২৩৩, জিহাদ তুরবানি
২- مدينة المسلمين في الأندلس, জুসেফ ম্যাক
৩-উইকিপিডিয়া (আরব)

লেখাটি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

Wednesday, May 27, 2020

বেসরকারী স্বাস্থ্যখাতে চাই পর্যাপ্ত সুরক্ষা ও স্বাস্থবীমা : মো ইয়াউমিন কাওসার চৌধুরী


কভিড-১৯ চিকিৎসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে প্রাইভেট মেডিকেল সেক্টরকে।  খুবই ভালো এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হিসেবেই মনে করি।
 এমন একটা নির্দেশনা কিংবা অনুমতি প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশের জন্য।  

যেহেতু আমি নিজেই একজন হসপিটালের কর্মী সেহেতু এই বিষয়ে রয়েছে বাস্তব অভিজ্ঞতা।  প্রাইভেট হসপিটালগুলোতে বিগত মার্চ মাস থেকেই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে জ্বর, সর্দি, কাশির রোগী ভর্তি না করানোর ব্যাপারে, কারন করোনা সন্দেহ। এখন যেহেতু এই অনুমতি দেওয়া হয়েছে তাই এই ব্যাপারে কোন হসপিটাল অবহেলা করার সুযোগ থাকবে না নিসন্দেহে। 

ভয়ের জায়গা হলো কভিড-১৯ একটি মারাত্মক ছোঁয়াচে ও মরনব্যাধী রোগ।  সরকারী হসপিটালে কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থকর্মীদের জন্য সরকারীভাবে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা, সুরক্ষা সামগ্রী সহ স্বাস্থ্যবীমা ঘোষনা করেছে ইতিমধ্যেই। যেখানে প্রাইভেট সেক্টরগুলোর অনেক প্রতিষ্ঠানেই পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রীই নেই। আর সেখানে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সহ বীমা ত দুরাশা। 

প্রাইভেট মেডিকেলে কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থকর্মীদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী, স্বাস্থ্য বীমার ব্যবস্থা না করে এমন নির্দেশনা জারি কি আদৌ কোন জনকল্যান বয়ে আনবে নাকি এই সেক্টরটিকেও করুন পরিণতির দিকে ধাবিত করবে, তাও ভেবে দেখতে হবে? 

সরকারের উচিত এসকল প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যাবস্থা করা সহ  স্বাস্থ্যবীমার আওতায় নিয়ে আসা।  এতে প্রাইভেট মেডিকেলের স্বাস্থকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্ত কাজ করবে এবং এই বৈশ্বিক মহামারী মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেই আমার বিশ্বাস। 

তাই যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে প্রাইভেট সেক্টরের এই বৈশ্বিক মহামারীর চিকিৎসা সেবা চালুর সিদ্ধান্ত প্রনয়ন কারা উচিত।  নয়তো আমাদের অবস্থা হবে ভয়াবহ.....

লেখক : অনলাইন এক্টিভিস্ট 

Tuesday, May 26, 2020

গরীবের ডাক্তার ডা.রাবেয়া বেগমের পিতা হারানোর আকুতি...

আমার কলিজার টুকরা  সব জায়গায় মধ্য মনি হতে চাইত, প্রাধান্য চাইত, শিরোনাম হতে চাইত।
আব্বগো, আল্লাহ রাহমানি রহিম বড়ই  মেহেরবান। তোমাকে তিনিও বড় প্রাধান্য দিয়েছেন, পবিত্র রামাদানে, নাযাতের মহিমান্বিত বেজোড় রাতে তোমায় তিনি মেহমান হিসেবে কবুল করেছেন।  আলহামদুলিললাহ!দুনিয়ায়ও তুমি শিরোনাম হয়ে গেলে।
সকাল সাতটা থেকে আট টার মধ্যে তোমাকে নিয়ে ওসমানী মে কলেজ হাসপাতালে গেলাম, কত আকুতি করলাম,  ওরা নিলো না। রেফার করলো শামসুদ্দিন হাসপাতালে।
ইমারজেন্সীতে দাঁড়িয়ে রইলাম আধা ঘণ্টা,  তারপর ডাক্তার এলো, বনধ দরজার ওপাস থেকে বলল এক নমবর ওয়াডে নিয়ে যান। শুধু এটুকু বলার জন্য আরো নীল হলো আমার বাবা।নিজে আমার সাথে আনা এম্বুলেন্স এর করমিদের সাথে করে ট্রলি নিয়ে ছুটছি, কেউ বলে দেবার,  দেখিয়ে দেবার নেই  এক নম্বর কোন দিকে। উদভ্রান্তের মতো ছুটছে এক ডাক্তার বানানোর কারিগর তার ডাক্তার বাবাকে নিয়ে। যে বাবা আজীবন শুধু বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিয়ে গেলো হাজার হাজার মানুষের, যে বাবা আজীবন heath sector এর অনিয়ম দূর করতে লড়েছে, সরকারী কর্মকর্তার responsibility পালন করতে  আমাদেরকে ভূলে যেতো।না  শুধু গরীববের না, সমাজের সব সুযোগ সনধানীরা জানতো ডাক্তার মতিন পয়সা নেবেন না।
trolley ঠেলছি, Oxygen silynder ambulance এ fixed, নীল গাঢ় হচ্ছিল...।  ওয়াডে পৌছুলাম, নোংরা বেডে আমার perfectionist বাবাকে নিজে টেনে হিঁচড়ে নামালাম। বলা হলো যান   oxygen musk কিনে আনেন। নীল গাঢ়তর হচছে। কতশত ডাক্তার কে ফোন দিলাম কেউ ধরল না। তিন চার ঘন্টা এভাবেই কাটলো।
কোন ডাক্তার এলো না।  শুধু oxygen দিয়ে বসে রইলাম।
তারপর  Director brig gen Dr Yunus সাহেবের কানে যখন ফোন গেলো তিনি খুব সহযোগিতা করলেন। তার order এরও এক ঘন্টা চলে যাবার পর এক ওয়াড বয় এসে বলল রুগী ICU তে নেবো,  কিন্তু trolley কে ঠেলবে? আমি বল্লাম আমি। আবার ছুটে চলছি। বেলা দুটোয় ডাক্তার এলেন। আমাকে বললেন ICU bed occupied ,  তবে আমি চাইলে একটা alternative ব্যবসতা হবে,  কিন্তু রুগীর যে condition,  তাতে লাভ হবে না। লাভ না হবার condition তো তৈরী করলেন,  anoxic organ damage তো করা শেষ।

 আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ, আমাকে এক শহীদ পিতার গর্বিত সন্তান বানানোর পথ সুগম করায় সার্বিক  সহযোগিতা করার জন্য।

ধন্যবাদটা শুধু brig gen সাহেবকে দিবো না।

বিঃ দ্রঃ বাবার সরকারি চাকরির কঠিনতর দায়িত্ব পালন, আপোষহীন নীতির জন্য বারবার অনাকাঙ্ক্ষিত বদলী, অল্প কয়েকটা টাকায় সংসার চালানো দেখে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ জয়েন করলাম। বিশটি  বছর
দেশের মানুষের জন্য কাজ করে আজ জানলাম আমি এ দেশের এক অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান।

হে দেশ তোমার এই অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানের অসীম ঘৃণা গ্রহণ কর। আমার বাবার সকল বংশধর তোমাকে আজীবন ঘৃণা জানাবে।

লেখাটি ডা. রাবেয়া বেগম (গাইনোকলজিস্ট) এর ফেসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া।  উল্লেখ্য গত ২৩শে মে তার পিতা ডা. আব্দুল মতিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

Saturday, May 16, 2020

অনু গল্প: পরাজিত সৈনিক - মো: ইয়াউমিন কাওসার চৌধুরী


".......বাচ্চা , দেখে চালাতে পারিস না " কলার চেপে কয়েকটা চড়-থাপ্পড় লাগল লাল টি-শার্ট আর জিন্স প্যান্ট পরা নাদুস নুদুস স্মার্ট ছেলেটা। সাথে আরো কয়েকটা গালি ....

নাহ! আমার কিছুই হয়নি। হাতের তালুতে শুধু সামন্য ছিলে গেছে।  লাফ দিয়ে  পড়ে যাওয়ায় রাস্তার পাশের কাদাঁ লেগে গিয়ে সাদা শার্টটা ময়লা হওয়া ছাড়া আমার আর কিছুই হয়নি .........

অফিসে যাচ্ছিলাম।  রিক্সার অপেক্ষা করছি আর গ্রীষ্মের এই তাপদাহে শরীরটা একটু ফুটিয়ে নিচ্ছি আর কি ! এরই মাঝে চাচা মিয়ার খালি রিক্সাটা ভাগ্যের জোরে পেয়ে গেলাম আর অমনিতে চড়ে বসলাম। চাচার বয়স আর কতই হবে? বড় জোর ৬৫!  রিক্সা চালাচ্ছেন, মনে হচ্ছে এই যেন পুকুর থেকে গোসল করে আসলেন, বাসায় যাচ্ছেন কাপড় টা চেঞ্জ করবেন!

মাত্র রিকাবী বাজারের পয়েন্টে মেডিক্যাল রোডে মোড় নিলেন, পেছন থেকে বিরাট একটা ধাক্কা!  মনে হল আমি যেন হাওয়ায় উড়ছি। একেবারেই গিয়ে পড়লাম ড্রেনের পাশে কাদা জলের উপর। যাহোক ঝেড়ে- ঝুড়ে উঠে দাড়াতেই হুঙ্কারটা শুনলাম আর চাচা মিয়ার গালে পালসার চালক, ধনীর দুলালের একটু আদর!  সরাসরিই উপভোগ করলাম!

চাচা প্রতিবাদ করলেন, " আমি তো বাম সাইডেই আছিলাম, আপনিই না পেছন থাইক্যা আইসা ধাক্কা দিলেন ......"
"কি মুখের উপর কথা, আবার তর্ক করে বেটা .......বাচ্চা ..........তরে দেখাচ্ছি মজা " বলেই ঠাস! ঠাস! করে আরো কয়েকটি উত্তম - মাধ্যম চাচার কপালে জুটল আর নাম না নেওয়া আরো কয়েকটি  বংশ পরিচয়ের বুলি।

যেন লংকা বিজয় করেছে , এমন ভাব সাব নিয়ে ছেলেটা বু বু করে বাইকটা নিয়ে চোখের সামনেই চলে গেল।আমি নিশ্চুপ! নির্বাকক।ছেলেটা যাওয়ার পর লোকজন রিক্সা চালককে  ঘিরে হালকা একটা ঝটলা বাধালেন। আমি নিচু মাথা নিয়ে চাচা মিয়ার কাছে আসলাম, বেচারার মুখ পানে তাকাতেই বুকটা ধুক! করে উঠলো। এ কি হাল!  চাচার সারা মুখ রক্তে লাল, ভেজা শার্টটা যেন আর সাদা নয় , লাল রঙের!

তবুও চাচার শরিরের দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই, দু মুটো অন্ন আহরনের একমাত্র অবলম্বন রিক্সার পেছনের চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া চাকাটার দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে । আমাকে দেখেই " আপনেই কন আমার কি কোন দোষ আছিল ? আপনে কিছু কইলেন না?" বলে চাচা মিয়া কেদে উঠলেন।

আমি কি বলব? কিই বা বলার আছে?  নিরব, নিশ্চুপ । যেন পরাজিত এক সৈনিক ............

(গল্প-১৯)

Tuesday, May 5, 2020

গল্প : নাবিলের আব্বু



মো: ইয়াউমিন কাওসার চৌধুরী

আজ সকাল থেকেই নাবিলের খুব খুশি লাগছে। আনন্দে তার নাচতে ইচ্ছে করছে আর সুর করে গান গাইতে
 মন চাচ্ছে "তাত দিনা দিন দিন.........' কারন আজ তার প্রথম জন্মবার্ষিকী। জন্মবার্ষিকী জন্য অবশ্য তার খুশি খুশি লাগছে না। খুশি লাগছে অবশ্য অন্য কারনে।
গতকাল রাত্রে যখন তার আম্মু তাকে ভাত খাইয়ে দিচ্ছিল তখন হঠাৎ করেই তাকে বলল " আব্বু তুমি কি জানোকালকে
 তোমার জন্মদিন? " 
নাবিল তখন বলেছিল " দম্মদিন তি আম্মু?" 
তখন তার আম্মু তার আদরের দুলালের কপালে চুমু একে দিয়ে বলেছিল "জন্মদিন হল যেদিন তুমি এই দুনিয়ায় এসেছিলে " 
নাবিল তার আম্মুর এমন কঠিন কথার কোন মানেই খুজে পেলনা। সে ফ্যাল ফ্যাল করে তার আম্মুর মায়াবি মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।

সে ভেবে কুল কিনারা করতে পারল না আম্মুর এই কথার অর্থ। সে ভাবনার জগতে হারিয়েই গেল, আর কোন কথা না বলেই
 সুবোদ বালকের মতো খাওয়া দাওয়া শেষ করল।
রাত্রে যখন আম্মু তাকে ঘুম পাড়ানির গান গেয়ে ঘুম
 পাড়াচ্ছিলেন তখন সে আর চুপ রইল না। নাবিল আম্মুকে বলল "আম্মুআমি আদে তৈ তিলাম? "  নাবিলের আম্মু প্রথমে ছেলের এমন প্রশ্ন বুজতে না পারলেও পরক্ষনেই বুঝে নিলেন ছেলের মনের কথাটি। তাই তিনি মজা করেই বললেন " এই কথাতুমি আমার এই পেটের মধ্যেই ছিলে বাবা " বলেই তিনি মুচকি হেসে ছেলেকে 
বুকে জড়িয়ে নিলেন  মায়ের এমন উষ্ণ ভালোবাসায় নাবিলও দুহাতে মাকে জড়িয়ে ধরল। সে মনে মনে চিন্তা করল রাজুদের ঘরে দেখা মুরগির 
বাচ্চাগুলোর কথা।

 রাজুর কথা মনে হতেই তার মনে পড়ে গেল রাজুর আব্বুর 
কথাযাকে সে আন্কেল বলে ডাকে।সে প্রায় প্রতিদিনই দেখে রাজুর আব্বু যখন বাইরে থেকে আসে তখন তার জন্য চকলেটবিস্কিটখেলনা আরো কত কিছুই 
নিয়ে আসে। কিন্তু তার আব্বু কৈ ? তিনি তো এখনো একদিনও নাবিলকে দেখতে এলেন না ...

নাবিল তার আম্মুকে আরো শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে। আদুরে তুলতুলে কন্ঠে বলল "আম্মু আমাল আব্বু তৈ?" ।ছেলের এমন প্রশ্নে নাবিলের আম্মু থমথম খেয়ে যান। তিনি কি জবাব দেবেন তাই খুজে পাচ্ছিলেন না। নাবিল  সময় যদি তার মায়ের মুখের দিকে তাকাত তাহলে
 দেখতে পেত তার মায়ের মুখ কেমন কালবৈশাখীর আকাশের রূপ ধারন করেছে। তিন শত কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে বললেন "তুমার আব্বুকে 
বুঝি দেখত চাও? "নাবিল মাথা নেড়ে বলল, "হুম দেততে তাই " "ঠিক আছে বাবা তাইলে এখন ঘুমাওকাল সকালেই তুমাকে নিয়ে যাব তোমার বাবার কাছে "
নাবিল খুশিতে কাল সারারাত ঘুমুতে পারে নি।কিন্তু মায়ের বকুনি খাবে বলে ঘুমের ভান করেছে সারাটি রাত্রি। সকাল সাকাল তাই ঘুম থেকে উঠে পড়েছে আজ। 

তার যেন আর তর সহ্য হচ্ছে না। খুশিতে তার আগডুম - 
বাগডুম ৭রে নাচতে ইচ্ছে করছে। সে গতকাল সারা রাত বাবাকে নিয়ে অনেক পরিকল্পনা 
করেছে। 
নাবিল প্লান করেছে বাবা যদি তাকে প্রচুর পরিমানে ক্যান্ডি না দেয়তাহলে সে তার সাথে কথাই বলবে না ......
মা টাও যে কিএত বেলা হয়ে গেল তবুও কোন সাড়া নেই। কখন যাবে বাবার কাছে নিয়ে। তার যে আর দেরি সহ্য হচ্ছে না। বাবার গলা জড়িয়ে ধরবে। বাবার গালে ,নাকেকপালে উম্মা দেবে ঠিক রাজু যেভাবে তার বাবাকে দেয়। রান্নাঘরে নাবিল মায়ের চারপাশে আলতো আলতো পা ফেলে ঘুর ঘুর করতেই থাকে....মায়ের কি আর বুজতে বাকি বাবার মমতা ছাড়া বেড়ে উঠা ছেলেটি আজ কি চায়নাবিলের মাও হাতের কাজে তাড়া দেন। দ্রুত কাজ শেষ করে ছেলেকে গোসল করিয়ে নেন। সাদা পঞ্জাবিপাজামা আর টুপি পরিয়ে দেন হাড়ি থেকে একটু কালি হাতের আঙুলে লাগিয়ে ছেলের কপালের ডান পাশে একটি ছোট্ট বৃত্ত একে দিয়ে বলেন "আমার রাজপুত্র বাবা "

নাবিলের আনন্দ দেখে কে। তার যেন আজকে ঈদের আনন্দ। আনন্দে তার দম প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কালো বোরকায় আপদমস্তক ডাকা নাবিলের আম্মু তাকে কোলে তুলে নিলেন। রওয়ানা দিলেন নাবিলের আব্বুর সাথে সাক্ষাত করার জন্য। নাবিলের মনে থেকে থেকে আনন্দের ঝিলিক দিলেও গত রাত থেকে তার মায়ের মনে কেমন অশান্তি বিরাজ করছে। ফর্সা মুখখানা যেন এক অজানা দুশ্চিন্তায় ফ্যাকাসে হয়ে আছে। তিনি তার আদরের দুলালকে কোলে নিয়ে হাটতে হাটতে হারিয়ে গেলেন কল্পনার রাজ্যে।
বেশি দিন আগে নয়বছর চারেক আগের কথা। রকারি প্রাইমারি স্কুলে সদ্য চাকুরি পাওয়া রাহামের সাথে নাফিসার বিয়ে হয়। নাফিসা তখন ডিগ্রী শেষ বর্ষের ছাত্রী। যদিও নাফিসা এই সময়ে বিয়ে করতে মোটেই প্রস্তুত ছিল না।তারপরেও তাকে রাজী হতে হয়েছিল বাবা মায়ের জন্যই। গ্রামে সাধারনত তার বয়সী মেয়ে খুব কমই পাওয়া যাবে যাদের বিয়ে হয়নি। 
মোটামুটি ধুমধাম করেই নাফিসার বিয়েটা হয়ে গেল। চেনা - জানা এক পরিবেশ থেকে সম্পূর্ণ এক অচেনা পরিবেশে এসে নাফিসা তার সংসারকে নিজ কর্মগুণে সাঝাতে শুরু করে দিল। সে ধীরে ধীরে শশুড়-শাশুড়ির মনে জয়গা করে নিল আপন মেয়ের মতই। বিয়ের পর প্রথম প্রথম মা-বাবাকে অনেক মিস করলেও রাহামের মা-বাবার আচরনে নাফিসা তার নিজ বাবা মায়ের অভাবটুকু ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠতে লাগল। স্বামীর সোহাগ আর শ্বশুড় শাশুড়ির ভালোবাসায় তার বেশ আনন্দেই দিন কাটাতে লাগল।
নাফিসার মনে পড়ল সেই রাতটির কথাযেদিন প্রানের স্বামীকে নাবিল তার গর্ভে আসার শুভ সংবাদটি দিয়েছিল। সেদিন সারা রাত্রি রাহাম ঘুমায়নি। তাদের সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে। যদি ছেলে হয় তবে কি নাম রাখবে আর মেয়ে হলে কি নাম রাখবে? ?? 
ভাবতে ভাবতে সে রাতটি নির্ঘুমই কেটেছিল দুজনার। অতপর ভোরের আলো ফুটার পর রাহাম যে কান্ডটি করেছিল তা স্মরণ করলে এখনো নাফিসা লজ্জায় লাল হয়ে উঠে....

(চলবে)